শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

চীনে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১, আতঙ্কে ‘বন্ধ’ ১৪ শহর

চীনে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১, আতঙ্কে ‘বন্ধ’ ১৪ শহর

স্বদেশ ডেস্ক:

চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ১৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এই হুবেই প্রদেশেই প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। চীনে বর্তমানে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৮৭ জনে যাদের মধ্যে অন্তত ৪১ জন মারা গেছেন।

চীনে নতুন চন্দ্র বর্ষ উদযাপন শুরু হওয়ার সাথে সাথে এই খবর আসলো। এটি দেশটির ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলির একটি। অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে এবং উহান শহরে নতুন একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপেও। ফ্রান্সে তিন জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফরাসি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার রাতে জানিয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে প্রথম জন বোরডক্সের এবং বাকি দুজন প্যারিসের বাসিন্দা।

চীনের মিডিয়াগুলো বলছে, নতুন এক হাজার শয্যার হাসপাতালটি ছয় দিনের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। এটি নির্মাণে ৩৫টি খনন যন্ত্র এবং ১০টি বুলডোজার কাজ করছে।

এই প্রকল্পটি “চিকিৎসা ব্যবস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটির সমাধান করবে” এবং “দ্রুত নির্মাণে খরচও তেমন হবে না কারণ এটি আগেই তৈরি করা ভবনে নির্মাণ করা হচ্ছে,” চ্যাংজিয়াং ডেইলি-তে বলা হয়।

উহানের ফার্মেসিগুলো ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকটে পড়েছে এবং হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ভীত মানুষের সংখ্যা। এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে প্রথমে তার জ্বর হয়, এরপর দেখা দেয় শুকনো কাশি এবং সপ্তাহ খানেক পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ অবস্থায় অনেকেরই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া জরুরী হয়ে পড়ে।

প্রতি চার জন আক্রান্তের একজনের অবস্থা মারাত্মক হয়ে পড়ছে।

হুবেই-তে কী ধরণের বিধি-নিষেধ রয়েছে?
এক শহর থেকে আরেক শহরের মধ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পার্থক্য রয়েছে। চীনের ১৪টি শহর কার্যত ‘বন্ধ’ করে দেয়া হয়েছে। উহানকে মূলত অচল করে দেয়া হয়েছে: সব ধরণের বাস, মেট্রো এবং ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সব ধরণের বিমান এবং ট্রেন চলাচলও বাতিল করা হয়েছে।

বাসিন্দাদের অন্য কোথাও চলে না যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইঝাউ- যা কিনা হুবেই প্রদেশের একটি ছোট শহর, সেটি এর রেল চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এনশি শহর সব বাস চলাচল বন্ধ করেছে।

চীনের অন্য স্থানের কী অবস্থা?
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, রাজধানী বেইজিং এবং সাংহাইয়ে নির্দেশনা রয়েছে যে, যেসব বাসিন্দা ভাইরাস আক্রান্ত স্থান থেকে ভ্রমণ করে এসেছে তাদেরকে ১৪ দিন বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়ে যাতে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যায়।

প্রধান প্রধান পর্যটন এলাকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যেমন বেইজিংয়ের ফরবিডেন সিটি এবং গ্রেট ওয়ালের এক অংশ। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় বড় ধরণের প্রধান প্রধান অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে:

  • বেইজিংয়ে ঐতিহ্যবাহী টেম্পল ফেয়ার
  • হংকংয়ে একটি আন্তর্জাতিক কার্নিভাল
  • হংকংয়ের বার্ষিক ফুটবল টুর্নামেন্ট
  • ম্যাকাউয়ে সব ধরণের চন্দ্র বর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান

সাংহাইয়ের ডিজনি রিসোর্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করা হচ্ছে। পাঁচটি শহরে বন্ধ করা হচ্ছে ম্যাকডোনাল্ডেসের রেস্টুরেন্ট। বৃহস্পতিবার, হুবেই প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগী মারা যায়- যা হুবেইয়ের বাইরে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু।

পরে উহান থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরের হেইলংজিয়াং প্রদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরো একটি মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

এর আগে, যখন মৃতের সংখ্যা ১৭ ছিল, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলে যে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল ৪৮ বছর বয়সী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ ছিল ৮৯ বছর বয়সী।

কিন্তু ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনই ছিল ৬০ বছরের বেশি বয়সী এবং অর্ধেকেরও বেশি অন্য রোগ যেমন পারকিনসন্স ডিজিস এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিল। এদের মধ্যে মাত্র চার জন ছিল নারী।

বিশ্বের অবস্থা কী?
ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাঙ্গনেস বুজিন বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৪৮ বছর বয়সী একজন চাইনিজ বংশোদ্ভূতকে উহান থেকে ফিরে আসার পর বোরডক্সের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় জন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে সে চীন থেকে ফিরে আসার পর প্যারিসের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

বুজিন বলেন, “ইউরোপে সংক্রমণের আরো অনেক ঘটনা সামনে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”

শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি প্যারিসে আরো একজন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান।

সিঙ্গাপুর শুক্রবার তৃতীয় আরেক জন আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। এই ব্যক্তি আক্রান্ত এক রোগীর ছেলে বলে জানানো হয়। একই দিনে নেপালে একজন আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা যায়।

থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত পাঁচ জন আক্রান্ত হয়েছে; জাপান, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই জন করে আক্রান্ত হয়েছে; এবং তাইওয়ানে একজন আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে এখনো “আন্তর্জাতিক জরুরী অবস্থা,” বলে ঘোষণা করেনি কারণ বিশ্ব জুড়ে এখনো এতে আক্রান্তের সংখ্যা কম।

“এটি এখনো বড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে,” বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আঢানম ঘেব্রেয়েসাস। বিবিসি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877